ঢাকা , বুধবার, ০১ জানুয়ারী ২০২৫ , ১৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আলু সংরক্ষণ নিয়ে শঙ্কা

​আন্দোলনের হুমকি আলু চাষিদের

স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় : ২৯-১২-২০২৪ ০৪:৪১:২০ অপরাহ্ন
আপডেট সময় : ২৯-১২-২০২৪ ০৪:৪১:২০ অপরাহ্ন
​আন্দোলনের হুমকি আলু চাষিদের
চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণের ভাড়া বাড়ানোর আকস্মিক সিদ্ধান্তে ক্ষোভে ফুঁসছেন চাষিরা। রাজশাহীর বিভিন্ন স্থানে চাষিরা সমবেত হয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন। আগামী ১০ জানুয়ারির মধ্যে রাজশাহী হিমাগার মালিক সমিতি বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার না করলে হিমাগার ঘেরাও করা ছাড়াও বড় ধরনের আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন আলু চাষিরা। এবার আলু সংরক্ষণ নিয়ে চাষিরা শঙ্কিত।

আলু চাষিরা অভিযোগ জানিয়ে বলেন, লাভজনক হয়ে ওঠায় রাজশাহী জেলাজুড়ে ব্যাপকভাবে আলুর চাষ হচ্ছে গত কয়েক বছর ধরে। আবাদ মৌসুমে উৎপন্ন আলুর বাজার চাহিদা ও দাম কম থাকায় সারা বছর হিমাগারে সংরক্ষণ করেন রাজশাহীর কয়েক হাজার বাণিজ্যিক চাষি ও মৌসুমি ব্যবসায়ী। হিমাগার থেকে বের করে এসব আলু বছরের বারো মাস বিক্রি করা হয় ও বিভিন্ন স্থানে চালান করা হয়। আলু সংরক্ষণের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা থাকায় গত কয়েক বছরে রাজশাহীজুড়ে আলু চাষ ব্যাপকভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

ভুক্তভোগী চাষিদের অভিযোগ, গত বছর রাজশাহীর হিমাগারগুলোতে মৌসুমে আলু সংরক্ষণের ভাড়া ছিল প্রতি কেজিতে ৪ টাকা। তবে এবার আলুর আবাদ শুরুর পর হিমাগার মালিকরা সংরক্ষণ ভাড়া বাড়িয়ে দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন একতরফাভাবে। ফলে আলু সংরক্ষণ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। কারণ সংরক্ষণ খরচ বাড়ার ফলে তাদের মুনাফার পরিমাণ কমে যাবে।

রাজশাহী জেলা আলু চাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নুরুল ইসলাম বলেন, গত বছর রাজশাহীর হিমাগারগুলোতে এক মৌসুমের জন্য আলু সংরক্ষণের ভাড়া ছিল প্রতি কেজি ৪ টাকা। কিন্তু আবাদ শুরুর পর বাণিজ্যিক আলু চাষি ও ব্যবসায়ীরা অগ্রিম বুকিং দিতে গেলে তাদেরকে জানানো হয়েছে এবার প্রতি কেজি আলুর সংরক্ষণ ভাড়া ৮ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সাধারণ চাষিরাও হিমাগারে বুকিং দিতে গিয়ে সংরক্ষণ ভাড়া দ্বিগুণ হওয়ার কথা জানতে পারেন। এরপর থেকেই আলু চাষিদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

জেলার মোহনপুর উপজেলার আলু চাষি আমিনুল হক কবিরাজ বলেন, চাষিরা কাছাকাছি থাকা হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণ করেন। এতে পরিবহণ খরচ কিছুটা কম হয়। গত মৌসুমে আমরা ৫০ কেজির এক বস্তা আলু সংরক্ষণে হিমাগার ভাড়া দিয়েছি ২১০ টাকা। এটাকে পেইড বুকিং বলা হয়। অন্যদিকে খোলা আলু সংরক্ষণ ভাড়া কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। সাধারণভাবে ৬০ থেকে ৬৫ কেজি খোলা আলুর সংরক্ষণ ভাড়া গত বছর ছিল ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। এটাকে লুজ বুকিং বলা হয়। গত বছর আমরা দুই ধরনের বুকিং ব্যবস্থায় কেজিপ্রতি আলু সংরক্ষণে গড়পড়তা ৫ টাকা করে ভাড়া দিয়েছি। এবার সেই ভাড়া বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে দেওয়া হয়েছে।

তানোর উপজেলার কালিগঞ্জ এলাকার আলু চাষি সাজেদুল ইসলাম বলেন, হিমাগারে আলু সংরক্ষণে বিদ্যুৎ খরচ ছাড়া অন্য কোনো বাড়তি খরচ নেই। বিদ্যুতের দাম বাড়েনি। হিমাগারের শ্রমিকরা চাষিদের ভাড়ায় আলু ওঠা-নামার কাজ করেন। ঠিক কী কারণে এবার সংরক্ষণ ভাড়া দ্বিগুণ হবে-সেটা আমাদের বোধগম্য নয়। হিমাগার মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে চাষিদের সঙ্গে কোনো আলোচনাও করার দরকার মনে করেননি। তানোরের আলু চাষি আব্দুল মান্নান সমাবেশে বলেন, আমরা আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত হিমাগার মালিকদের সময় বেঁধে দিলাম। মালিকরা বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার না করলে আমরা চাষিরা হিমাগার ঘেরাও করব। প্রয়োজনে সব হিমাগারের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে।

এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৬ ডিসেম্বর তানোরের গোল্লাপাড়া বাজার মাঠে হিমাগার ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে কয়েক হাজার আলু চাষি বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশ থেকে আলু চাষিরা আন্দোলনের ঘোষণা দেন। তারা বলেন, হিমাগার মালিকরা বর্ধিত ভাড়া প্রত্যাহার না করলে হিমাগারগুলোর সামনের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। যাতে হিমাগারে আলু যেতে না পারে। সমাবেশ শেষে আলু চাষিরা তানোর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) চার দফা সংবলিত একটি দাবিনামা জমা দেন।

জানতে চাইলে তানোরের ইউএনও খাইরুল ইসলাম বলেন, আলু চাষিদের একটি স্মারকলিপি পেয়েছি। আমরা হিমাগার মালিকদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। আলু সংরক্ষণ করতে গিয়ে চাষিরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জানতে চাইলে রাজশাহী হিমাগার মালিক সমিতি বা কোল্ডস্টোরেজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবু বাক্কার বলেন, জ্বালানি খরচসহ হিমাগারের ব্যবস্থাপনা ব্যয় বেড়েছে। শ্রমিক ভাড়াও বেড়েছে। বর্ধিত সংরক্ষণ ভাড়া আদায় না করলে হিমাগার পরিচালনা করাই কঠিন হয়ে যাবে। কোল্ড স্টোরেজ সমিতির সভাপতি আরও বলেন, প্রতি বস্তায় ৫০ কেজি আলু রাখার কথা। কিন্তু চাষিদের সুবিধার্থে আমরা ৬০ থেকে ৬৫ কেজিও গ্রহণ করি। কিন্তু গত কয়েক বছরে আমরা দেখেছি চাষিরা ৫০ কেজির কথা বলে বস্তায় ৭৫ থেকে ৮০ কেজিও আলু রাখেন। এতে আমরা হিমাগার মালিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বস্তায় বেশি আলু থাকলে লোড-আনলোডের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের বেশি ভাড়া দিতে হয়। অনেক সময় শ্রমিকরা অতিরিক্ত লোডের বস্তা ওঠানামা করতে চায় না। চাষিদেরও বিষয়গুলো বুঝতে হবে। আমরা চাই চাষিরাও আমাদের সমস্যাগুলো বুঝবে।

উল্লেখ্য, রাজশাহীতে সর্বাধিক ৩৮টি হিমাগার রয়েছে যেগুলোর মোট ধারণক্ষমতা ৮০ লাখ বস্তা। ওজনের পরিমাপে হয় সাড়ে ৫ লাখ টন। হিমাগারগুলোর অধিকাংশই জেলার পবা, তানোর, মোহনপুর, বাগমারা ও দুর্গাপুর এলাকায় অবস্থিত। চলতি মৌসুমে রাজশাহীতে ৩৭ হাজার ৬৬৭ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। এই পরিমাণ জমি থেকে ১০ লাখ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/ এনআইএন/এসকে 


প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ